কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
গত সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার সময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর হালদার পাড়ার শহিদুলের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত গ্রামের কুটি মনি, শহিদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, কওসের ও রেজাউলের নাম প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি পত্র পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশিত হয়। এলাকাবাসীর প্রাপ্ত তথ্যমতে স্পষ্ট জানা গেছে যে, কতিপয় ব্যক্তিকে ঘায়েল করার জন্য শহিদুল এর পরিবার এই ডাকাতি নাটক সাজিয়েছেন।
ডাকাতির বিষয়টির সত্যতা কতখানি তা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে আমির আলীর ছেলে টাইলস মিস্ত্রি শহিদুলের বাড়িতে গিয়ে শহিদুল ও তার স্ত্রী তানিয়া খাতুন এর সঙ্গে কথা বলার জন্য ঘরের ভেতর বসা মাত্রই শহিদুল কাকে যেন মোবাইলে ফোন দিয়ে কথা বলল যে, একজন সাংবাদিক এসেছে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কাকে ফোন দিলেন, তিনি স্পষ্ট বললেন আখতার চেয়ারম্যানকে ফোন দিলাম।
শহিদুলের স্ত্রী তানিয়া বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে বাড়ির পেছন গেট ধাক্কানোর শব্দ শুনে আমার ননদ আজিরন নেছা দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে চারজন মুখোশধারী ব্যক্তি ঘরের ভেতরে ঢুকে একজন আজিরন নেছার গলায় ছুরি ধরে, একজন গিয়ে বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেয়। তানিয়া বলেন, ওই সময় আমার বাড়িতে আমি আমার কন্যা ও আমার ননদ অবস্থান করছিলাম আমার স্বামী ও শশুর বাড়িতে ছিল না।
ডাকাত দল ঘরের সব আসবাবপত্র উল্টো পাল্টা করে কোন নগদ টাকা না পেয়ে আমার ৮ বছরের শিশু সুমাইয়ার গলায় হাসুয়া ধরে বলে টাকা ও গহনা বের করে দে না হলে তোর মেয়েকে জবাই করবো। অবশেষে মেয়েকে বাঁচাতে স্বামীর মোটরসাইকেল কেনার ৭০ হাজার টাকা, দুইটি স্বর্ণের চেইন, পাঁচটি আংটি, কানের দুল ও পায়ের নুপুর (৩ ভরি) স্বর্ণালংকার দিতে বাধ্য হই।
তানিয়া প্রতিবেদককে বলেন, উক্ত ৪ জন ব্যক্তিকে আমরা চিনতে পারি নাই তাদের মুখে মুখোশ পরা ছিল শুধু চোখ দেখা গেছে এবং তারা এটাও বলেন, উপরোক্ত পাঁচজনের যে নাম দিয়ে নিউজ প্রকাশ করেছে তারা আমাদের আত্মীয়। আমরা কারো নাম প্রকাশ করি নাই আমরা তো চিনতেই পারি নাই যে কে ডাকাতি করল অথচ এখানে ৫ জনের নাম বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, কে বা কারা নাম দিয়েছে আমরা বলতে পারি না। মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমরা কারো নামে এখনো মামলা করি নাই। এখানে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়, সেটি হল ঘরের ভিতরে ঢুকলো চারজন কিন্তু পাঁচজনের নাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হল কেন? কথায় আছে চোর চুরি করলে কিছু আলামত রেখে যায় এটাই হল তার প্রমান ঢুকলো চারজন হল পাঁচজন।
তানিয়া আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশে খবর দিলে কুষ্টিয়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশের এস আই লিটনের উপর দায়িত্বভার অর্পণ করেন কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত।
ডাকাতির বিষয় নিয়ে তার পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আমরা তাদের বাড়ির পাশে বসবাস করি তাদের বাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে আমরা বাইরে থেকে কোন প্রকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই নাই হঠাৎ দেখি পুলিশের গাড়ি চলে এসেছে তারপর শুনতে পারি এ বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাড়া-প্রতিবেশীরা এটাও বলেন রবিউলের বাড়িতে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড চলে এবং প্রতিনিয়ত একাধিক মহিলাদের আগমন দেখা যায়, সেইসাথে আলমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মতলেবের পুত্র সাদেক, সেক্রেটারি মজিবর, সাদ আলীর ছেলে আসলাম, ফজলুর ছেলে জলিল, দুধ মল্লিকের ছেলে কামালসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের আগমন দেখতে পাই। এছাড়াও গত কোরবানি ঈদের চার পাঁচ দিন আগে কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশ রবিউলের বাড়ি তল্লাশি করেন। এই তল্লাশির বিষয়ে শহিদুল কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে এলাকাবাসী বলছে শহিদুল পোড়াদহ টাইলস মিস্ত্রির কাজ করে পাশাপাশি সে ইয়াবার ব্যবসা করে যাচ্ছে, যে কারণে ডিবি পুলিশ তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে। পাড়া-প্রতিবেশী এটাও বলেন শহিদুল ও তার স্ত্রী তানিয়া মাঝে মধ্যে বাইরে এসে বলে আমাদের হাত অনেক লম্বা কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না বলে পাড়া-প্রতিবেশীকে এই সমস্ত কথাগুলো প্রায়ই বলেন এবং এটাও বলেন টাকা থাকলে কাঠের পুতুল ও হা করে। দুদিন আগে যাদের কিছু ছিল না হঠাৎ করে শহিদুল এত টাকা পেল কোথায় এটা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে? শহিদুলের বাড়িতে ডাকাতি হওয়ার পরদিন দুপুরে শহিদুল বাড়ির বাইরে এসে মনের আনন্দে গান গাইছে এটাও পাড়াপ্রতিবেশী লক্ষ্য করেছে। শহিদুল ইসলামের স্ত্রীর বক্তব্য নেওয়ার সময় তিনি একপর্যায়ে বললেন, এই বিষয় নিয়ে আর লেখালেখি করার দরকার নাই ভাই যা হবার তা হয়ে গেছে।
এলাকার সুশীল সমাজ এবং মসজিদের একজন ইমাম পর্যন্ত প্রতিবেদককে বলেন, শহিদুলের অনৈতিক ব্যবসা ও ইয়াবা ব্যবসার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সকল আশপাশের বাসিন্দারা। যে কারণে তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য এই নাটক সাজিয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী ওই পাঁচ জন ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদেরকে সামাজিকভাবে ঘায়েল করার জন্য ওই কুচক্রী মহল প্রতিবেদককে দিয়ে আমাদের নাম পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করেছে আমরা উক্ত সংবাদের তীব্র নিন্দা জানাই। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা এসআই লিটনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ওই দিন রাতেই কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফার মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম এটি ডাকাতি না প্রতিবেশীর সাথে দ্বন্দ্ব বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রহস্য ঘেরা এই ডাকাতি, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড উন্মোচনের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করে এলাকার সুধীমহল থেকে শুরু করে সকল প্রকার সাধারণ জনগণ। তারা আরো বলেন সুষ্ঠু তদন্ত করলেই শহিদুল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতি, অনৈতিক ব্যবসা ও মাদক ব্যবসার থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।