সোহেল রানা, যশোর প্রতিনিধিঃস্বামী আর একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে অসহায় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ছবিরন নেছা (৬৫) নামে এক দুখিনী মা।জীবন বাঁচাতে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাড় করতে চায়ের দোকানে পানি তুলার কাজ করেন তিনি। সিমিত রোজগারে খেয়ে না খেয়ে চলছে তার সংগ্রামী জীবন।
রোববার দুপুরে শার্শার নাভারণে পথ শিশু ও ভারসাম্যহীন পাগলদের খাবার বাড়ি খেতে এসে কান্নারত অবস্থায় ক্যামেরা বন্ধি হয় ছবিরন। জানা যায় তার কান্নার পেছনের নানা ঘটনা।চোখের কোনে এক সমুদ্র জল নিয়ে ছবিরন নেছা বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন চায়ের দোকানে পানি তুলতে তুলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।এখন আর শরীরে বল পাইনা। তার মধ্যে প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালায় মাথা ঘুরছে।
১৫ টাকা নিয়ে খেতে যাচ্ছিলাম এখানে আসতেই ওনারা আমাকে খেতে দিয়েছে। অনেক তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছি।এখন একটু ভাল লাগছে বাবা।পরিবারে কে কে আছে এমন প্রশ্নে অঝর ধারায় কষ্টমাখা জল গড়িয়ে পড়লো ছবিরন নেছার দু’চোখ দিয়ে।কান্না করতে করতে বলেন এ জগতে আমার আপন বলতে কেউ নাই।
সাত বছরের এক ছেলে সন্তানকে ফেলে স্বামী মারা গেছে ৪০ বছর আগেই।একমাত্র সন্তান নয়ন হোসেনকে বুকে আগলিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছে নিয়ে পরের দুয়ারে দুয়ারে কাজ করে সন্তানকে বড় করেছি।আজ সেই সন্তানও বিয়ে করে দুরে কোথাও আলাদা থাকে। আমাকে কখনও তার বাড়িতে যেতে দেয় না।খেতেও দেয়না।বলতে বলতে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্বামী সন্তানহীন ৬৫’র বৃদ্ধা ছবিরন।তবু কেউ রাখেনা তার খোঁজ।পাইনা বয়স্ক ভাতার কোন সুযোগ সুবিধা। পেটের ক্ষুধায় রোজগার করতে রাস্তায় তিনি। ছবিরন নেছা ঝিকরগাছা উপজেলার হেড়েদেয়াড়া গ্রামের মহসিন হোসেনের স্ত্রী।
পথ শিশু ও পাগলদের খাবার বাড়ির পরিচালনাকারী বাদল হোসেন বলেন,ছবিরন এখান দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলে তিনি খুব ক্ষুধার্ত। তাই তাকে রাস্তা থেকে ডেকে আমাদের এই ফ্রি খাবার বাড়িতে এনে খেতে দি।মাত্র দুই দিনে ফ্রি খাবার বাড়িটি খুব আলোচিত হয়েছে। ছবিরনকেও প্রতিদিন খাবারের জন্য বলা হয়েছে।ছবিরন যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তিনি এখান থেকে খাবার পাবেন।
খাবার বাড়ির প্রধান উদ্যোগতা ও মানবসেবা হেল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দেশসেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, পথ শিশু,ভারসাম্যহীন পাগল,প্রতিবন্ধি,ভিক্ষুক এবং ক্ষুধার্ত মানুষের খাবার খাওয়ানোর জন্যই আমাদের এই পথচলা। মানবসেবা হেল্প ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় আর্তমানবতায় কাজ করছে প্রবাস ও দেশের কয়েক হাজার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। আমি সকলের প্রতি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।