কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানাধীন ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের কতিপয় শিক্ষিত বেকার যুবক মৎস্য বিপ্লব ঘটাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। একদিকে বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যয়ে দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন শেষে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকেরা একত্রিত হয়ে সাহাপুর এর কচুরি গাঙ খ্যাত জমিতে যৌথ মালিকানায় পুকুর খননের মাধ্যমে মৎস্য চাস, হাঁস মুরগি পালন গরুর খামার স্থাপন ও কৃষি বিপ্লব ঘটাতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের সামগ্রিক মৎস্য চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়াই সরকার এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণে যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করতে মৎস্য অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সহ সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করেছেন।
আর এই সকল সরকারি উদ্যোগের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাধীন, ১১ নং আব্দালপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের কতিপয় যুবকের গল্পটা এমন…
সময়টা ২০২০ সালের মাঝামাঝি। সারাদুনিয়া যখন কোভিড ১৯ মহামারীতে আতঙ্কিত, সেখানে “মরার উপর খাড়ার ঘা” হিসেবে পুরা খুলনা বিভাগ লন্ডভন্ড করে দেয় ঘূর্ণিঝড় আমফান !। যার শিকার কুষ্টিয়া জেলা এবং কৃষক !
এমন একটা মূহুর্তে শাহাপুর গ্রামের কতিপয় যুবক, যারা দেশের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা কলেজ এর মত জায়গায় অধ্যায়ন করেছেন। এদের উদ্যোগে কোভিড ১৯ সমসাময়িক গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। রাতের আঁধারে অভাবি, কর্মহীন মানুষের দোরগোড়ায় ত্রান সামগ্রী বিতরণ করেছেন। দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে ঘরে দিয়েছেন। মানুষের পাশে থেকেছেন..
এভাবেই অনুপ্রাণিত হয়ে শহুরে শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার চেষ্টায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কর্মমুখী শিক্ষার উদাহরণ বা উদ্যোক্তা তৈরি সহায়ক ভূমিকা পালন , গ্রামের কম শিক্ষিত বা শিক্ষিত বেকারদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে..
শাহাপুর গ্রামের কচুড়িগাং খ্যাত, যেখানে বসরের বেশিরভাগ সময় পানি থাকায় চাষের সুযোগ নেই বললেই চলে, ডোবা পরিত্যক্ত জমিকে সম্পদে পরিণত করতে একটি মৎস্য চাষ পরিকল্পনা হাতে নেয় এবং স্থানীয় কৃষকদের সাথে নিয়ে স্বপ্ন পূরণে কাজে নামেন ।
উদ্যোক্তাদ্বয় পরিচিতি-
১। মোঃ আজিজুর রহমান
পিতা মৃত বাবুর আলী মালিথা
পেশা: কৃষিকাজ
২। সাইদুল ইসলাম
পিতা মৃত বাবর আলী বিস্বাস
পেশা: ব্যবসা (প্রাত্তন ছাত্রর জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়,প্রাত্তন HSBC কর্মকর্তা)
৩। মোঃ নাজমুল ইসলাম
পিতা- মোঃ লিয়াকত আলী
পেশা: কৃষিকাজ ।
৪। মোঃ তারেকুজ্জামান
পিতা: মোঃ আসাদুজ্জামান
পেশা: প্রাইভেট চাকুরী।
৫। নাজমুল হক সিদ্দিকী
পিতা: আবু বকর সিদ্দিক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ।
৬। আবুল কালাম আজাদ
পিতা মৃত তাহাজ্জেল বিস্বাস
পেশা: চাকুরীজীবী ।
সম্মেলিত প্রচেষ্টায় উদ্যোগী উদ্যোক্তাদ্বয়,
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং সার্বিক সহযোগিতার আশা ব্যক্ত করলে, মৎস্য কর্মকর্তা সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য আসস্থ করেন।
পরবর্তীতে ডিসেম্বর মাসের দিকেও পানি না কমায় সেচের ব্যবস্থা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া এবং অনেকটা নিচু জমি হওয়ার ফলে কাঁদা মাটিতে পথ করে জমির মাটি বের করাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়।
পরিকল্পনা মোতাবেক পুকুরের দুই দিকের পাড় যথাযত মজবুত করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে যাতে করে বর্ষা মৌসুমে পাড়ের ক্ষতি না হয়।
উদ্দেশ্য সমূহ- দেশীয মাছের চাষ, পাড়ে হাঁস-মুরগী পালনের ব্যবস্থা রেখে, ছাগল পালন সহ বিভিন্ন ছোট ছোট কর্ম পরিকল্পনা যা নবীন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারা । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মধ্য দিয়ে, গ্রামীণ যুব সমাজকে গ্রীন প্রজেক্টে সমূহে উৎসাহিত করা ।
এফএও’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বে প্রায় ১৮ কোটি টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। এর অর্ধেকেরও বেশি স্বাদু পানির মাছ। বাকিটা সামুদ্রিক মাছ। ২০১৭ সালেই স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ পঞ্চম থেকে তৃতীয় স্থান লাভ করে। এবারও সে অবস্থান ধরে রেখেছে। গত বছর প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে যথাক্রমে চীন ও ভারত। চাষের মাছে বাংলাদেশের অবস্থানটি চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের পরে।
এতে বলা হয়েছে, করোনায় অন্যান্য খাতে কর্মী ছাঁটাই হলেও মৎস্য খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ জড়িত। আর পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে মোট উৎপাদন বেড়েছে ছ গুন ।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে মানুষের মাছ খাওয়া বেড়েছে ১২২ শতাংশ। বিশ্বের সাতটি দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অর্ধেকের বেশি আসে মাছ থেকে। বাংলাদেশ প্রাণিজ আমিষের ৫৮ শতাংশ আসে মাছ থেকে। আর বিশ্বে গড়ে প্রাণিজ আমিষের ২০ শতাংশ আসে কেবল মাত্র মাছ থেকে। এদিকে গত ১০ বছরে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ প্রায় শতভাগ বেড়েছে। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ যার এক-চতুর্থাংশ অবদান এককভাবে মৎস্য খাতের। আবার সার্বিক কৃষি খাতের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ হলেও মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের উপরে রয়েছেমোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান এখন ৪ শতাংশ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এক সাক্ষাৎকারে জানান,মৎস্য উৎপাদনে সব দিক দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ খাতে আরও এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে চাই।
ব্যাপক মাছ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এ খাতকে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব দূর করাসহ কর্মসংস্থানে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। আমাদের